নবম-দশম শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ বছর সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিস্তারিতভাবে জুলাইয়ের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে তুলে আনা সম্ভব হয়নি। তবে ২০২৬ সালের জন্য যে পাঠ্যবই রচনা করা হবে সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা থাকবে। তারপরেও এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে জুলাই-আগস্টের আলোচিত বেশ কিছু কার্টুন ও গ্রাফিতি যুক্ত করা হচ্ছে। দেয়ালের ভাষা কতটুকু আমাদের হৃদয়কে উদ্বেলিত করতে পারে এবং পুরো জাতিকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে ঐক্যের বন্ধনে দাঁড় করাতে পারে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বইয়ের পাতায় তুলে ধরা হচ্ছে ২০২৫ সালের পাঠ্যপুস্তকে।
অপর দিকে সময়ের স্বল্পতার পরেও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে এই ইতিহাসের বিষয়গুলো উপরের ক্লাসের ইতিহাস কিংবা পৌরনীতি বইয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
সূত্র মতে, পতিত আওয়ামী লীগের বিতর্কিত কারিকুলাম অনুসারে ২০২২ সাল থেকে প্রবর্তিত প্রত্যাখ্যাত কারিকুলাম বাদ দিয়ে পুনরায় ২০১২ সালের কারিকুলামের আলোকেই পাঠ্যবই মুদ্রণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগের (২০১২ সালের) কারিকুলামে ফিরে গেলেও বেশ কিছু বিষয়ে সেখানেও আনা হয়েছে পরিমার্জন, সংশোধন ও সংযোজন। ইতিহাসের অধ্যায়ে দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে ভূমিকা রাখা নেতাকে বাদ দিয়ে যেখানে এককভাবে মুজিব বন্দনা গাওয়া হতো তারই ইতি টানা হয়েছে নতুন পাঠ্যবইয়ে। তবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে যে যতটুকু প্রাপ্য ঠিক তাকে ততটুকুই মূল্যায়ন করা হয়েছে। ইতিহাস বিদগ্ধ নেতাদের মধ্যে মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে এম ফজলুল হকসহ দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে এবং পূর্বাপর সময়ে যিনি যেভাবে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রেখেছেন তাকে ঠিক সেভাবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। একইভাবে জাতীয় চার নেতার ছবিও সমান গুরুত্ব দিয়ে নতুন পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে।
এ দিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্র জানিয়েছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং দেশের অগণিত অভিভাবকদের একান্তভাবে চাওয়া শিক্ষার্থীদের নীতি-নৈতিকতা শেখানোর অন্যতম বিখ্যাত কবিতা কবি কাজী কাদের নেওয়াজ লিখিত ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি পুনরায় পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে এই কবিতা যুক্ত করা হচ্ছে। একই সাথে শিশুদের মননশীলতার বিকাশ ও সুস্থ চিন্তাশক্তির প্রেরণার কবিতা ‘আমার পণ’ কবিতাটিও তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
অপর দিকে দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের পরে অর্থাৎ ১৯৭১ সালের পরে যখনই যে সরকার দেশের শাসন ক্ষমতায় এসেছে তারাই নানাভাবে ইতিহাসকে বিতর্কিত কিংবা বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। তাই ২০২৫ সালের পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস অংশে ১৯৭১ সালের পর ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোনো ইতিহাসকে স্থান দেয়া হয়নি। তবে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতীয় চার নেতার ভূমিকা নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবকাশ নেই। তাই চার নেতাকে যথাযথভাবেই শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে এম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবুর রহমানকেও তাদের প্রত্যেকের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সম্মান দেয়া হয়েছে। একই সাথে শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদানকেও ন্যায্যতার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। ইতিহাসের পাতায় যার যতটুকু অবদান বা ভূমিকা তাকে ঠিক ততটুকুই সম্মান দেয়া হয়েছে। এখানে ছোট বা বড় করা হয়নি। কোনো বিতর্কও রাখা হয়নি।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান নয়া দিগন্তকে জানান, নতুন পাঠ্যবইয়ে ইতিহাসে যার যেমন ভূমিকা সেটি সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের বিষয় যুক্ত করা হবে। তিনি জানান, ২০২৫ সালের জন্য প্রণিত পাঠ্যপুস্তক ২০১২ সালের কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। তবে আমরা যেভাবে পরিমার্জন করছি তাতে বিভিন্ন শ্রেণীর বইয়ে ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন থাকবে। একই সাথে আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে দেশের মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি সম্মান রেখেই সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তবে কোনোভাবেই কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে আঘাত করা যাবে না।